ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাবারে দেওয়া বিট লবণই ক্ষতিকর

আপলোড সময় : ১৯-০১-২০২৪ ০৫:৪৭:০০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৯-০১-২০২৪ ০৫:৪৭:০০ অপরাহ্ন
খাবারে দেওয়া বিট লবণই  ক্ষতিকর ফাইল ছবি
কমবেশি সবারই প্রিয় খাবারের তালিকায় দেখা যায় চাটনি, সালাদ, বোরহানি, ফুচকার নাম। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন, এ খাবারগুলোর সঙ্গে আপনার দেহে যাচ্ছে ভয়াবহ টক্সিক উপাদান। হ্যাঁ, এসব খাবারে দেওয়া বিট লবণই এই ক্ষতিকর উপাদানটি বহন করছে।


বিট লবণ-

বিট লবণ এক ধরনের খনিজ লবণ, যা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের হিমালয়ের আশপাশের লবণসমৃদ্ধ মাটির নিচ থেকে পাথর আকারে উত্তোলন করা হয়। এই লবণ মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড ও অল্প সোডিয়াম সালফেট, সোডিয়াম বাইসালফেট, সোডিয়াম সালফাইড, আয়রন সালফাইড এবং হাইড্রোজেন সালফাইডের অপদ্রব্য দিয়ে তৈরি। বিট লবণের নোনতা স্বাদটি সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে আসে। আয়রন সালফাইডের উপস্থিতির কারণে লবণটি গাঢ় বেগুনি রঙের হয়। সালফারের মিশ্রণগুলো বিট লবণের সুস্বাদের পাশাপাশি একটি অতি বৈশিষ্ট্যসূচক গন্ধ দেয়। পচা ডিম ও নষ্ট দুধের গন্ধের জন্য হাইড্রোজেন সালফাইড মূলত দায়ী। আম্লিক বাইসালফেট বা বাইসালফাইটগুলো একটি হালকা টক স্বাদ দেয়।
বিট লবণ আমাদের দেশে মসলা হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার রন্ধনপ্রণালিতে বিট লবণ খুব পরিচিত নাম। এটি কালো লবণ বা সুলেমানি লবণ নামেও পরিচিত। চাটনি, সালাদ, ফল, জুস, বোরহানি, ফুচকাসহ প্রায় সব ধরনের ভারতীয় ও চাইনিজ খাবারে বিট লবণ যোগ করা হয়। খাবারকে চটজলদি সুস্বাদু করলেও বিট লবণের রয়েছে নানাবিধ ক্ষতিকর প্রভাব, যা অনেকেরই অজানা।

বিট লবণের প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সালফেট, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ফেরিক অক্সাইড, ফেরাস সালফেট ও ফ্লুরাইড ইত্যাদি। অনেকের ধারণা, সাধারণ লবণের চেয়ে বিট লবণে সোডিয়াম কম থাকে বলে তা হয়তো উচ্চ রক্তচাপ কমায় ও শরীরের পক্ষে ততটা ক্ষতিকর নয়।

পুষ্টিবিদদের মতে, যে সব লবণে সোডিয়াম কম থাকে, সেগুলোতে আবার পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি। পাটাশিয়াম (Potassium) শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। তবে যে কোনও খনিজই শরীরে বেশি মাত্রায় জমতে থাকলে সমস্যা বাড়ে। শরীরে পটাশিয়াম বেশি গেলে কিডনির ওপর প্রভাব পড়ে। তাই কিডনির সমস্যা (Kidney issue) থাকলে কম সোডিয়াম দেওয়া লবণ না খাওয়াই ভালো।

ফ্লুরাইড ও বিট লবণ-

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বিট লবণে প্রায় প্রতি মিলিয়নে রয়েছে আড়াইশ শতাংশ পরিমাণ ফ্লুরাইড। এটি পটাশিয়াম বা সোডিয়াম যেকোনো ফ্লুরাইড হতে পারে। যা প্রচুর টক্সিন সমৃদ্ধ। ৪.৯ গ্রাম অর্থাৎ, প্রতি চা চামচ বিট লবণে রয়েছে ০.৫৬ গ্রাম ফ্ল‍ুরাইড। ফ্লুরাইড থাইরয়েড গ্রন্থি, হাড়, জয়েন্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। এটি এমন একটি উপাদান যা সীসা, পারদ ও রেডন গ্যাসের (radon gas) মতোই বিষাক্ত।

ফ্লুরাইড কি-

দাঁত ও হাড়ের গঠনে ফ্লুরাইড প্রয়োজনীয় উপাদান। মানবদেহে ফ্লুরাইডের সহনীয় মাত্রা ২ থেকে ৩ মিলিগ্রাম। কিন্তু তা যদি ৪ মিলিগ্রামের ওপরে চলে যায় তাহলে তা বিষে পরিণত হয়। খাবার পানিতেও ফ্লুরাইড রয়েছে। এক লিটার পানিতে ০.৫ থেকে ১.০ মিলিগ্রাম ফ্লুরাইড থাকে। এর বেশি মাত্রায় থাকলে তা দূষণ পর্যায়ে চলে যায়। শরীরে ফ্লুরাইডের অতিরিক্ত মাত্রা ফ্লুরোসিস নামের রোগ তৈরি করে। ফলে ওজন হ্রাস পায়, ত্বকে প্রদাহ দেখা দেয়, দাঁতের ক্ষতি হয় ও চুল পড়া থেকে শুরু করে নানা সমস্যা দেখা দেয়।

ভারতের দিল্লির ফ্লুরোসিস গবেষণা ও পল্লী উন্নয়ন ফাইন্ডেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে বিট লবণ খাওয়ায় ভারতে ফ্লুরাইড বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় ৬৬ মিলিয়নেরও বেশি। এই গবেষণার পর প্রতিষ্ঠানটি বিট লবণ ও বিট লবণ দিয়ে তৈরি স্ন্যাকস বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়।

সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ২.৩ গ্রামের কম ও পঞ্চাশোর্ধ্বদের ১.৫ গ্রাম লবণ খাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে লবণে যদি ফ্লুরাইড থাকে তাহলে তা হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা সৃষ্টি করে, রক্তস্বল্পতা, রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও পাকস্থলির ঝিল্লির ক্ষতি করতে পারে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ